বিজ্ঞপ্তি:
দৈনিক শাহনামার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। জাতীয়, রাজনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন সহ সকল সংবাদের সর্বশেষ আপডেট জানতে ভিজিট করুন www.shahnamabd.com

ইতিহাসের কলঙ্কিত হত্যাযজ্ঞের দিন ২৫ মার্চ আজ

ইতিহাসের কলঙ্কিত হত্যাযজ্ঞের দিন ২৫ মার্চ আজ

বিশ্বের মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি ঘৃণ্য ও কলঙ্কিত হত্যাযজ্ঞের দিন ২৫ মার্চ।

১৯৭১ সালের এই ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) মানুষের ওপর ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞ চালায় পকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই ভয়াবহ ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে স্মরণ করে বাঙালি জাতি।

এই রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ‘অপারেশন সার্চ লাইট’র নামে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে বিশ্বের ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যা মেতে উঠে। ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ ছিল বাঙালির একটি প্রজন্মকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার এক নারকীয় পরিকল্পনা। পোড়া মাটি নীতি নিয়ে নেমেছিলো পাকিস্তানি ঘাতকরা। সুনির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পাকিস্তানি নর ঘাতক জেনারেল টিক্কা খান বলেছিলেন, ‘আমি পূর্ব পাকিস্তানের মাটি চাই, মানুষ চাই না’। ফলশ্রুতিতে বাঙালি জাতির জীবনে নেমে আসে বিভীষিকাময় ভয়াল কালরাত্রি।

১৯৪৭ সালের পশ্চাতপদ দ্বিজাতি তত্বের ভিত্তিতে পাকিন্তান নামের যে রাষ্ট্রের জন্ম সেই রাষ্ট্রের কাঠামোর মধ্যে পূর্ব বাংলা অর্থাৎ বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। শুরুতেই পাকিস্তানি শাসক শ্রেণী বাঙালি জাতির ওপর অত্যাচার নির্যাতন, শোষণ চালাতে থাকে। এই শোষণ অত্যাচার নির্যাতনের বিরুদ্ধে শুরুতেই প্রতিবাদ করতে থাকে বাঙালি জাতি। ধরাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্ন সামনে চলে আসে। শুরু হয় স্বাধীনতা সংগ্রাম। এই স্বাধীনতা সংগ্রামের চুড়ান্ত পর্বে এবং স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলনরত বাঙালি জাতির ওপর ২৫ মার্চ বর্বর সশস্ত্র হামলা ও গণ হত্যা শুরু করে পাকিস্তানি বাহিনী।

২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী স্বাধীনতাকামী বাঙালির উপর হিংস্র দানবের মতো ঝাঁপিয়ে পড়লে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। জাতির পিতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাংলার সর্বস্তরের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ওই দিন রাত থেকেই আধুনিক অস্ত্রশন্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে বাঙালি রাস্তায় নামে। রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে নানাভাাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা থেকে পুলিশ ও ইপিআর এর বাঙালি সদস্যরা পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে অন্ত্র ধারণ করে রাস্তায় নামে। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে রাস্তায় নামে।

২৫ মার্চ কালো রাতে শুরু হওয়ার পর পরই বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানি সেনা বাহিনী ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। গ্রেফতার হওয়ার আগেই বঙ্গবন্ধু ধানমন্ডির বাসভবন থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ২৫ মার্চ থেকে শুরু হয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা চলতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় ধরে। ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত হয় বহুল প্রতীক্ষিত মহান স্বাধীনতা। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।

২৫ মার্চের কালরাত্রিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত হামলা ও সেই নৃশংস ঘটনার স্মরণে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ মহান জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণা করা হয়। এরপর এই দিনটিকে গণহত্যা দিবস উপলক্ষে বাঙালি জাতি স্মরণ করে আসছে।

Please Share This Post in Your Social Media




All rights reserved by Daily Shahnama
কারিগরি সহায়তা: Next Tech